Thursday, April 2, 2015

মানুষ সৃষ্টির রহস্য...

মানুষ সৃষ্টির রহস্য...

 

                                
আকাশমণ্ডল,পৃথিবী ও আদম সৃষ্টির রহস্য
আল কুরআন, কিতাব-ই-ইকান এবং বংশাবলি পুস্তকে আদম
আ: উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব। ইব্রাহিমের
ধর্মগ্রন্থে সৃষ্টিপর্বের তিনিই প্রথম মানুষ। বংশাবলির
সৃষ্টি ব্যাখ্যায় তিনি (Yahweh-Elohim) কর্তৃক সৃষ্ট (Yahweh-
God, the God of Israil)। আদম (ADM) তিন অরের একটি শব্দ যার
অর্থ red (রক্তিম), fair (সুন্দর) এবং handsome (সুঠাম)।
জেনেসিস গ্রন্থে আদম একটি ব্যক্তিগত নাম, পুংবাচক
বিশেষ্য যার অর্থ মানুষ, মনুষ্য সম্প্রদায়, মানবজাতি।
আদম শব্দটি adamah, যার অর্থ ‘মাটি’ অথবা ‘পৃথিবী’
তার পুংবাচক নির্দেশক। এটা adom (রক্তাভ), admoni
(লালচে) এবং dam (রক্ত) শব্দগুলোর সাথে সম্পর্কিত।
জেনেসিস-১ অনুসারে, ‘গড (ইলোহিম) মানুষ
সৃষ্টি করলেন পুরুষ এবং নারীরূপে। তিনি তাদের
আশীর্বাদ করলেন এবং তাদের নাম রাখলেন আদম।
এখানে আদম মনুষ্য জাতির জন্য সাধারণ সম্বোধন। গড
মনুষ্যজাতির কল্যাণ এবং বিকাশের আশীর্বাদসহ
উন্নতির সম্মতি প্রদান করলেন। সমুদ্রের মাছ, উড়ন্ত
পাখি, পালিত পশুদল এবং গভীর অরণ্যসহ বিশ্বের সব
স্থানে তাদের প্রভুত্ব করার অধিকার দান করলেন।’
জেনেসিস-২,‘গড মাটির ধূলিকণা দিয়ে আদম
সৃষ্টি করে তার নাসিকায় জীবন ছড়িয়ে দিলেন,
যা জীবন্ত আত্মায় রূপান্তরিত হলো। তিনি তখন
তাকে গার্ডেন অব ইডেনে রাখলেন। গড
তাকে আদেশ করলেন কাননের সব গাছের ফল খেতে,
শুধু একটি গাছ ছাড়া। যদি তার ফল খাওয়া হয়
তবে অবশ্যই মৃত্যু তাকে গ্রাস করবে।’ (genesis
2:16-17)র্যাবিনিক লিখিত মৃত সাগরের দলিলে আদম
সম্পর্কে বলা হয়েছে, ইডেন থেকে নির্বাসনের
আগে আদম ছিলেন একজন খাঁটি মানুষ, কিন্তু তারপর
তার মর্যাদার ঘাটতি হয়েছে। ইহুদিদের ঐতিহ্যগত
বিশ্বাস হলোÑ আদমের মৃত্যুর পর তাকে হেবরনের
ম্যাকপেলাহ কবরগাহে দাফন করা হয়। যশুয়ার
পুস্তকে ‘আদমের শহর’ বলে যে জায়গার উল্লেখ
করা হয়েছে সেটা সেই সময়ের কথা, যখন
বনি ইসরাইলরা জর্ডান নদী পার হয়ে কেনানের
দিকে যাচ্ছিল। কিন্তু এই শহরের সাথে প্রথম নরের
কোনো সম্পর্ক উল্লিখিত হয়নি।ইহুদিদের
খোদা জিহোভার বর্ণনা হলো, আদম এবং ইভ
পাপে নিমজ্জিত হয়েছিল। যার জন্য মৃত্যু তাদের
জীবন কেড়ে নিয়েছিল। তারা পৃথিবীতে পাপের
সূচনা করেছিল। যদিও জিহোভার স্পষ্ট নির্দেশ ছিল
জ্ঞানবৃরে কাছে না যাওয়া।
ইসলামে আদমকে সম্মান করা হয় প্রথম মানুষ হিসেবে।
তিনিই সেই ভাগ্যবান নর, যার সাথে আল্লাহ
সামনে থেকে কথা বলেছেন। তিনি ইসলামের প্রথম
নবী। প্রত্যেক মুসলমান আদমকে আদি মুসলিম
বলে জানে। কুরআন প্রচার করা সব নবী একই বিশ্বাসের
বাহক, যার ল্য হলো আল্লাহর সমীপে আত্মসমর্পণ।
(Concise Encyclopedia of Islam, C. Glasse, Adam)
মুহম্মদ ইবনে জরির আল-তারাবি ছিলেন হাদিস
এবং ইহুদিশাস্ত্রের একজন প্রখ্যাত মুসলিম টীকাকার।
তিনি বলেন, যখন আদম সৃষ্টির সময় হলো তখন আল্লাহ
জিবরাইল ও মিকাইলকে পৃথিবী থেকে মাটি আনার
জন্য পাঠালেন। তখন মাটি বলল, ‘তোমাদের আচরণ
থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি,
যদি আমার অস্তিত্ব বিপন্ন করার
মানসে তোমরা এসে থাক।’ যার জন্য
ফেরেশতারা খালি হাতে ফিরে এলেন। তখন
আল্লাহ মাটি নিয়ে আসার জন্য
আজরাইলকে পাঠালেন। তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন
অঞ্চল থেকে মাটি সংগ্রহ করে আনলেন। মানুষের
বর্ণবৈষম্যের কারণ এটিই। তাবারির বর্ণনা, আল্লাহর
প্রশ্বাস গ্রহণ করার পর আদম প্রাণহীন বিবর্ণ
দেহে চল্লিশ দিবস পড়ে থাকলেন। তারপর
মাথা থেকে পায়ের দিকে ক্রমশ প্রাণের সঞ্চার
হতে লাগল। তিনি যখন সজ্ঞান হলেন তখন বললেন, ‘সকল
প্রশংসা বিশ্বলোকের মালিকের জন্য।’ তখন
আদমকে তার অধীন প্রাণিকুলের ওপর আধিপত্যের
মতা দেয়া হলো। (On the Transmitters of Isra’iliyyat)
রাসূল সা:-এর হাদিসের বর্ণনায় আবু
হোরায়রা বলেছেন, ‘আল্লাহ পাক আদমকে ষাট হাত
দীর্ঘ করে পয়দা করলেন। যখন কোনো মানুষ
বেহেশতে প্রবেশ করবে সে আদমের মতোই দৈহিক
আকৃতিসম্পন্ন হবে।’ একটি জনপ্রিয়
ইসলামি ধারণা হলোÑ আদম সৃষ্টির পর থেকে তাঁর
বংশধর দৈহিক উচ্চতায় খাটো হয়ে যাচ্ছে।(Shahih
Bukhari volume 4 Book 55 Number 543)
বাহাইদের ধারণা, আদম হলো স্রষ্টার প্রথম সৃষ্টি।
বাহাই বিশ্বাস মতে, আদম সৃষ্টির ঘটনা ছয় হাজার বছর
আগে সংঘটিত হয়েছিল, যা বাহাউলার জন্মের
মাধ্যমে পূর্ণত্ব লাভ করে। বাহাই মতে, বাইবেলের
আদম এবং ইভের বর্ণনা রূপক কিচ্ছা ছাড়া কিছু নয়। যার
ব্যাখ্যা আবদুল বাহা, উদ্ভূত প্রশ্নের জবাবে প্রদান
করেছেন। দ্রুজরা আদম-হাওয়াকে মহাজাগতিক
দৈত্যশক্তি হিসেবে গণ্য করে। তারা একে অন্যের
পরিপূরক। আদম সার্বজনীন মননের প্রতিনিধি আর
হাওয়া সার্বিক আত্মা। প্রাচীন নষ্টিকদের প্রাজ্ঞ
অভিমত হলো, আদম ও ইভ সমগ্র মনন ও অখণ্ড সত্তাÑ
আধ্যাত্মিক জনক-জননী। আদমসত্তা দ্বারা তাদের
পরিচয় শনাক্ত হয়।(The Night of Departure from Eternity/Gnosis
of the Book of Life. Druzenet,2005)
হজরত আদম আদি মানব, প্রথম নবী। পৃথিবীতে আল্লাহর
প্রতিনিধির সূচনাসত্তা। অসংখ্য অনুগত
ফেরেশতা সক্রিয় থাকার পরও
প্রতিনিধি সৃষ্টি প্রসঙ্গে তাদের প্রবল আপত্তির
জবাবে আল্লাহ বলেন,
‘আমি যা জানি তোমরা তা অবগত নও। আদমকে সমুদয়
বস্তুর নাম শিা দিয়ে ফেরেশতাদের সামনে দাঁড়
করিয়ে তিনি বললেন, সত্যবাদী হলে তোমরা এর
মতো করে সব সৃষ্ট বস্তুর নাম বলে যাও।’ (বাকারা : ৩১)
যদিও ফেরেশতারা নিবিষ্টমনে বহমান সময়ের
ভাঁজে বন্দেগির স্নিগ্ধতা ঢেলে যাচ্ছিল, তবুও
অনুসন্ধানী মনন না থাকার কারণে তারা আল্লাহর
সৃষ্টিরাজি সম্পর্কে একেবারেই অনভিজ্ঞ ছিলেন।
তারা হলেন কামনা-বাসনাহীন বস্তুনিরপে এক
জাতি। খোদায়ী সৃষ্টির লীলাবৈচিত্র্য
এবং অবারিত উদ্দীপনা তাদের মনে এক বিন্দু
জ্ঞানপিপাসা জন্মায়নি। অগণিত বস্তুর নাম
এবং তার উদ্ভব-বিলয়ের খতিয়ান তাদের ছিল সম্পূর্ণ
অনায়ত্ত। এমন নির্মোহ সত্তার আরাধনা ঊর্ধ্বলোকের
শব্দহীন অসীমতায় প্রযোজ্য হলেও মৃত্তিকার প্রাণময়
কোলাহলে ছিল বড়ই বেমানান এবং অকিঞ্চিতকর।
আদম যখন পাণ্ডিত্য এবং দতার বিচারে অপ্রতিদ্বন্দ্বী
প্রমাণিত হলেন, তখন ফেরেশতারা আল্লাহর
নির্দেশে তাকে সিজদা করলেন একমাত্র ইবলিস
ছাড়া। আদমের সৃষ্টির সাথে হাওয়া এবং বিশ্বসৃষ্টির
প্রসঙ্গ এসে যায়। কেননা আদম সৃষ্টির
সাথে নাটকীয়ভাবে কিছু ঘটনা ঘটে যায়। আল্লাহর
আদেশ না মানার জন্য ইবলিসের উৎপত্তি, আদমের বাম
পাঁজর থেকে হাওয়ার উদ্ভব, বেহেশতের
সুখসম্ভোগে সস্ত্রীক স্থান লাভ এবং অনন্তজীবনপ্রদ
বৃরে ফল ভণের শয়তানি কুমন্ত্রণার
জালে আটকা পড়ে আদম-হাওয়ার
মর্ত্যলোকে নির্বাসন। প্রশ্ন জাগেÑ আদম
এবং বিশ্বসৃষ্টি কি সমসাময়িক ঘটনা?
কুরআন বলে, ‘তিনিই, যিনি সৃষ্টি করেছেন পৃথিবী ও
উচ্চতর আকাশসমূহ (ত্বহা-৪)। কুরআন আরো বলে,
‘তোমাদের সৃষ্টি করা কি অধিক কঠিন অথবা আকাশÑ
যা (আল্লাহ) সৃষ্টি করেছেন?
তিনি চাঁদোয়া উচ্চে তুলেছেন
এবং তাকে সুবিন্যস্ত করে সাজিয়েছেন।
তিনি রাতকে অন্ধকার করেছেন এবং প্রকাশ
করেছেন প্রভাতকে। এবং অতঃপর
তিনি তাকে (পৃথিবী) বিস্তীর্ণ করেছেন। সেখান
থেকে তিনি বের করেছেন তার পানি এবং তার
উদ্ভিদ। এবং পর্বতমালা তিনি স্থাপন করেছেন
সুদৃঢ়ভাবে। তোমাদের জন্য
খাদ্যসামগ্রী এবং তোমাদের পশুসমূহ। ( নাজিয়াত :
২৭-৩৩)
আল্লাহ পাকের সৃষ্টি এক সুসামঞ্জস্য প্রক্রিয়া।
অন্তরী এবং পৃথিবী একই ব্যস্থাপনায় তার প্রবল ইচ্ছার
স্বার্থক বিকাশ। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাসকে প্রশ্ন
করা হলোÑ আসমান ও জমিনের মধ্যে কোনটির
সৃষ্টি আগে এবং কোনটি পরে? তিনি জবাব দিলেন,
আসমানের আগেই জমিন সৃষ্টি করা হয়েছিল,
তবে জমিনকে বিস্তৃত করা হয়েছে পরে। আরেক
বর্ণনায় রয়েছে জুমার দিন আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে,
আর ওই দিনই কিয়ামত সংঘটিত হবে।
(তাফসিরে ইবনে কাসির) হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর,
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ এবং আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস
থেকে বর্ণিত আছে, আল্লাহপাক সর্বপ্রথম
পানি সৃষ্টি করেছেন, আর পানির ওপর তাঁর মহান আসন
স্থাপন করেছেন। যখন অন্য কিছু
সৃষ্টি করতে মর্জি হয়েছে তখন ওই
পানি থেকে ধূম্রজাল
সৃষ্টি হয়েছে তা দ্বারা তিনি আসমান
তৈরি করেছেন। তারপর পানি যখন শুকিয়ে গেল তখন
জমিন নির্মাণ করলেন এবং তা থেকে সপ্তজমিন
সজ্জিত হলো। রবি ও সোমবারে জমিন সৃষ্টি হলো। আর
মঙ্গল ও বুধবারে জমিনের যাবতীয় বস্তু বিন্যস্ত হলো।
বৃহস্পতি ও শুক্রবারে আসমান তৈরি হলো। এ জন্য জুমার
দিনকে জুমা বলা হয়। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস
থেকে বর্ণিত, জমিনের সাতটি স্তর রয়েছে। প্রথম
স্তরে মানবজাতি বাস করে, দ্বিতীয়
স্তরে আছে বাতাস, তৃতীয় স্তরে দোজখের পাথর,
চতুর্থ স্তরে দোজখের বিচ্চু, পঞ্চম স্তরে দোজখের
সাপ, ষষ্ঠ স্তরে গন্ধক এবং সপ্তম স্তরে রয়েছে ইবলিস
এবং তার দলবল। (খোলাসাতুত্তাফাসির, পৃ-২৪)
বাইবেলের আদিপুস্তকে (২:৪-৭) আছে,
‘সৃষ্টিকালে যেদিন সদাপ্রভু ঈশ্বর পৃথিবী ও
আকাশমণ্ডল নির্মাণ করলেন, তখনকার আকাশমণ্ডল ও
পৃথিবীর বৃত্তান্ত এইÑ যে সময়ে পৃথিবীতে েেত্রর
কোনো উদ্ভিজ হতো না, েেত্রর ঔষধি উৎপন্ন
হতো না, কেননা সদাপ্রভু গড পৃথিবীতে বৃষ্টিবর্ষণ
করেননি; আর ভূমিতে কৃষিকর্ম করতে মনুষ্য ছিল না। আর
পৃথিবী থেকে কুজ্ঝটিকা উঠে সমস্ত ভূতলকে জলসিক্ত
করল। আর সদাপ্রভু গড মৃত্তিকার ধূলিতে আদমকে নির্মাণ
করলেন। এবং তার নাসিকায় ফুঁ দিয়ে প্রাণবায়ু
প্রবেশ করালেন। তাতে মনুষ্য সজীব হলো।অষ্টাদশ
শতাব্দীর আগে পশ্চিমা বিশ্ব ধারণা করত, পৃথিবীর
বয়স মাত্র কয়েক হাজার বছর। এ ধারণার ভিত্তি ছিল
বাইবেলের আদিপুস্তক এবং অনুমান-নির্ভর
ঐতিহাসিক ঘটনা। আজকের সামগ্রিক ধারণা পৃথিবীর
বয়স কমপে সাড়ে চার বিলিয়ন বছর। বিশ্ব
সমীা সম্পর্কে এই মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গি দুটো স্বতন্ত্র
ধারায় এগিয়ে গেছে। প্রথমটির শুরু
রানি এলিজাবেথের সময় আমেরিকা আবিষ্কারের
পর থেকে। আর দ্বিতীয় ধারণাটির শুরু অনেক পরে, যখন
মানুষ দেখতে পায় Ôrock srata’
শিলাভ্যন্তরে কালপরিক্রমায় বিন্যস্ত হয়েছে। উভয়
ধারণার মূল ল্য হলো নূহ, তাঁর
নৌকা এবং মহাপ্লাবনকে অস্বীকার করা।
শ্বেতাঙ্গদের দ্বারা আমেরিকা ও
আফ্রিকা আবিষ্কারের পর ইউরোপীয়
খ্রিষ্টানরা বিভিন্ন বর্ণের নৃতাত্ত্বিক
জনগোষ্ঠী খুঁজে বের করে প্রশ্ন তুলল, এরা কি আদমের
বংশধর? যদি তা হয়,
প্লাবনে এরা কী করে বেঁচে গেছে? আদম ও নূহ
ছিলেন শ্বেতাঙ্গ। নূহের নৌকায়
না চড়ে এরা কী করে বাঁচল। তাদের কথায়
প্লাবনটি ছিল নিরেট আঞ্চলিক। এ ধরনের
চিন্তাবিদেরা এখনো জনহীন ইস্টার দ্বীপের
মনুষ্যকীর্তির হদিস বের করতে পারেননি। আটলান্টিক
মহাসাগরের বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের রহস্যের জট
কোনোকালে তারা খুলতে পারবেন কি না সন্দেহ।
স্রষ্টা ছাড়া বিশ্বজগৎ স্থিতি হওয়ার গোঁজামিল
থিউরি হলো বিগ ব্যাং। এর সুস্পষ্ট
দুর্বোধ্যতা হলো এটা মহাবিশ্ব, গ্যালাক্সি প্রাচীর,
পৃথিবী, সূর্য এবং চন্দ্রের জন্য কাক্সিক্ষত দূরত্ব নির্দেশ
করতে পারে না। পরিকল্পনাহীন, সুনিয়ন্ত্রিত
বিস্ফোরণ ছাড়া তা কখনোই অর্জন করা সম্ভব নয়। এর বড়
ব্যর্থতা হলো মহাশূন্যের বিশাল পরিধির সব বস্তুর
মধ্যে গভীর সংযোগ এবং ভারসাম্য রা করা। ধূমকেতু
হলো মহাকাশের ণিক অনুভবনীয় স্বল্পায়ু বস্তুর উদাহরণ।
হ্যালির ধূমকেতু অনেক বেশি আয়ুসম্পন্ন, যা প্রতি ৭৬
বছর পর আমাদের সৌরজগতে প্রবেশ করে। চার-পাঁচ
মাস সূর্যের চার দিকে ঘুরে আবার
সে মহাশূন্যে হারিয়ে যায়। Jan H. Oort নামে এক ডাচ
জ্যোতির্বিজ্ঞানী, ১৯৫০ সালে মন্তব্য করেন,
মহাবিশ্ব অসংখ্য অদৃশ্য ধূমকেতুর মেঘমালায় পরিপূর্ণ।
তিনি তার নাম দেন Oort cloud. বিগ
ব্যাং থিউরি দ্বারা কি এমন প্রচ্ছন্ন বিকাশোন্মুখ
অগণন ধূমকেতু সৃষ্টি করা সম্ভব হবে।
Herman Von Helmholtz নামে একজন জার্মান চিকিৎসক
১৮৪১ সালে প্রশ্ন তুললেন, সূর্য অতীতের চেয়ে ছোট
হচ্ছে। সূর্য ছোট হয়ে যাওয়ার হার যদি স্বাভাবিকের
চেয়ে বেশি হয়ে থাকে তা হলে এ কথা সহজেই
বলা যায় যে, পৃথিবীতে প্রাণের সঞ্চার মাত্র কয়েক
হাজার বছর আগে শুরু হয়েছে। অথচ জীবন্ত ফসিল
আবিষ্কারের ঘটনা সৃষ্টিবিকাশের ঐতিহাসিক
বাদানুবাদের মাঝখানে বিব্রতকর আঘাত
হেনে সবাইকে হতবাক করে দেয়। ১৯০৬ সালে জীবন্ত
পশুপালের মতো সন্ধান পাওয়া যায় Paleotragus-এর।
ধারণা করা হয়, এদের অস্তিত্ব ২৫ মিলিয়ন বছরেরও
আগে। Coelacanth নামের একপ্রকার মাছ ৭৫ মিলিয়ন বছর
ধরে পৃথিবীতে বাস করছে। মাদাগাস্কারের পশ্চিম
উপকূলে ১৯৩৮ সালে প্রথম এর সন্ধান পাওয়া যায়।
পরে ১৯৯৭ সালে ইন্দোনেশিয়ার Sulawesi
থেকে ৬০০০ মাইল দূরে অসংখ্য Coelacanth ধরা পড়ে।
ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবের সময়
খনি থেকে কয়লা উত্তোলন করতে গিয়ে William
Thompson ল করেন যে, খনির শ্যাফট এক শ’ ফুট
বসালে প্রস্তরের তাপ এক ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড
বেড়ে যায়। এরই সূত্র ধরে তিনি ডারউইনের
বিবর্তনবাদের তীব্র বিরোধিতা করেন। ডারউইনের
তত্ত্ব মোতাবেক পৃথিবী যদি প্রদর্শিত হারে তাপ
হারাত তাহলে মৃত্তিকা হয়ে পড়ত পাথরের
মতো ঠাণ্ডা আর সমুদ্রের বিশাল জলরাশি জমে বরফ
হয়ে যেত। তার জীবিতাবস্থায় ডারউইনের
থিউরি প্রবল বাধার সম্মুখীন হয়।
কয়েক হাজার কোটি বছর আগের কোনো একসময় মঙ্গল
গ্রহের পাহাড়ি এলাকায় পাথরের
কোলঘেঁষে বয়ে চলত খরস্রোতা নদী। দ্বীর্ঘ দিন
বয়ে যাওয়া সে নদীর পানিতে য়ে যেত
বেলে পাথর, জমত নুড়ি। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ
গবেষণা সংস্থা নাসার
পাঠানো কিউরিওসিটি রোবট
মঙ্গলে পানিপ্রবাহের সে প্রমাণ পেয়েছে। গত
২৭.০৯.২০১২ তারিখে এক
প্রতিবেদনে বিবিসি তা জানিয়েছে। নাসার
গবেষকেরা জানান, সেখানের কয়েকটি প্রাচীন
নদীর মোহনার সন্ধান পেয়েছে রোবট। সেটি ১০-১৫
সেন্টিমিটার পুরু একটি পাথর তুলে পরীা করেছে।
কানাডার একটি লেকের নামানুসারে পাথরটির
নাম রাখা হয়েছে হোটা।
পৃথিবীতে মানুষ আবির্ভাবের কোনো নির্দিষ্ট সন
তারিখ বিজ্ঞানীদের হাতে নেই। আল কুরআন,
বাইবেল এবং হাদিস শাস্ত্রেও এর কোনো সময়
উল্লেখ করা হয়নি। সুদূর অতীতের মনুষ্যকীর্তির যেসব
ধ্বংসাবশেষ ও নিদর্শন আবি®কৃত
হয়েছে তা থেকে মানুষ আবির্ভাবের
একটা মোটামুটি ধারণা পাওয়া যায়। আর
সে সময়টা হচ্ছে খ্রিষ্টপূর্ব এক কোটি বছর আগে।
আধুনিক বিজ্ঞানের গণনার ভিত্তি হচ্ছে ‘ক্র-ম্যাগনন
ম্যান’ নামে পরিচিত প্রাগৈতিহাসিক মানব
প্রজাতির অস্তিত্ব। অতি সম্প্রতি এই মানব প্রজাতির
সন্ধান পাওয়া গেছে, যা প্রমাণ করে এসব
প্রজাতি লাখ লাখ বছর আগে পৃথিবীতে ছিল।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস এবং আবদুল্লাহ
ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণিত আছে ইবলিশকে জান্নাত
থেকে বহিষ্কার করার পর হজরত আদম আ:
কে জান্নাতে স্থান দেয়া হয়।
তিনি সেখানে ছিলেন একা। সেজন্য ঘুমন্ত অবস্থায়
তার পাঁজর থেকে হজরত হাওয়াকে সৃষ্টি করা হয়। হজরত
আদম জাগ্রত হয়ে তাকে দেখে প্রশ্ন করলেন তুমি কে?
আর কেন তোমাকে তৈরি করা হয়েছে? হজরত
হাওয়া জবাব দিলেন, আপনার
জীবনসঙ্গিনী এবং শান্তি ও সান্ত্বনার উপকরণস্বরূপ
আমাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। তখন
ফেরেশতারা বললেন, হে আদম, বলুন দেখি তার নাম
কী? সাথে সাথে আদম জবাব দিলেন, হাওয়া।
ফেরেশতারা আবার প্রশ্ন করলেন, এই নামকরণের কারণ
কী? তিনি বললেন, যেহেতু তাকে জীবন্ত মানুষ
থেকে তৈরি করা হয়েছে, সেজন্য তার নাম হাওয়া।
আর ঠিক সেই সময় আল্লাহ পাক আদমকে সম্বোধন
করে বললেন, হে আদম, তুমি এবং তোমার
স্ত্রী বেহেশতে বাস করো আর যা ইচ্ছে আহার করো।
তবে ওই গাছটির কাছে যেও না।কুরআন বলে, অতঃপর
শয়তান তাদের পদস্খলন
ঘটিয়ে দিলো এবং তারা যেখানে ছিল সেই সুখ-
সম্মান থেকে তাদের বের করল
এবং আমি বলেছিলাম, তোমরা বেহেশত
থেকে নেমে যাও, তোমরা একে অন্যের শত্র“, আর
জগতে তোমাদের জন্য এক নির্দিষ্ট সময়ের
অবস্থিতি ও ভোগ সম্পদ রয়েছে। অতঃপর আদম তার প্রভুর
কাছ থেকে কয়েকটি বাক্য শিখে নিলো।
ফলে আল্লাহ তার তওবা কবুল করলেন, নিশ্চয়ই
তিনি অতিশয় মাশীল, অতীব দয়ালু। ( বাকারা :
৩৬-৩৭)
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত, হজরত আদম
আসরের সময় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত জান্নাতে ছিলেন।
হজরত হাসান বর্ণনা করেন, এই একটা ঘণ্টা দুনিয়ার ১২০
বছরের সমান ছিল। (তাফসিরে মাআরেফুল
কুরআন)আল্লাহর হুকুমে আদমকে অবতরণ
করানো হলো সন্দ্বীপে, হাওয়াকে আরবের জেদ্দায়।
আল্লামা ইবনে কাসির হজরত ওমরের একটি বর্ণনার
উদ্ধৃতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আদম সাফায়
এবং হাওয়া মারওয়াহ পাহাড়ে অবতরণ করেন।মাটির
পৃথিবীতে নিপ্তি হয়ে আদম ও হাওয়া খুবই লজ্জিত ও
বেদনাবিহ্বল হয়ে পড়লেন। ােভ, দুঃখ, হতাশা,
অভিমান, কান্তি, অপরাধবোধ এবং অরণ্যময়
পরিবেশের অজানা ভীতিতে দারুণ সঙ্কুচিত
হয়ে গেলেন। ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেন, হজরত আদম ও
হাওয়া বেহেশত থেকে বের হয়ে চল্লিশ বছর
ধরে কিছুই খাননি। আর লজ্জার কারণে ৩০০ বছর ওপরের
দিকে মাথা উত্তোলন করেননি। এই সুদীর্ঘ সময়
ধরে তারা আল্লাহর দরবারে ক্রন্দন করেছেন।
(খোলাসাতুত্তাফাসির পৃ: ৩০)
আদম ও হাওয়া আল্লাহর
দরবারে যে রোনাজারি করেছেন সে বেদনাবোধ
এবং আর্তনাদের সীমা নির্ধারণ করা বড়ই কঠিন বিষয়।
ইমাম রাজি তার সুবিখ্যাত
তাফসিরে কবিরে একখানা হাদিসের
উদ্ধৃতি তুলে ধরেছেন। প্রিয়নবী সা: এরশাদ করেছেন :
যদি সারা পৃথিবীর মানুষের কান্না একত্র করা হয়
তবে তা দাউদ আ:-এর কান্নার সমতুল্য হবে না। দাউদ
আ:-এর কান্না আর সারা দুনিয়ার মানুষের
কান্না যদি একখানে করা হয় তবে তা নুহ আ:-এর
কান্নার সমান হবে না। আর সারা জাহানের
মানুষের কান্নার সাথে যদি দাউদ ও নুহ আ:-এর
কান্না যদি একসাথে করা হয়, তবে আদম আ: গুনাহের
জন্য আল্লাহর সমীপে যে অবিরাম ক্রন্দন করেছেন
তার সমতুল্য হবে না। (তাফসিরে কবির : ১ম খণ্ড, পৃ :
৩১৩)আদমকে পৃথিবীর বুকে প্রেরণ করার সময় আল্লাহ
পাক যে বাণী উচ্চারণ করেছেন তা আদম ও তার
অনাগত সন্তানের জীবনযাত্রার রূপরেখা এবং মুক্তির
সনদ। কুরআন বলে, ‘আমি আদেশ করলাম
তোমরা সকলে এখান থেকে নিচে নেমে যাও।
অতঃপর আমার প থেকে যদি তোমাদের
কাছে কোনো হেদায়াত পৌঁছে, তবে যারা আমার
হেদায়াত মেনে চলবে, তাদের কোনো ভয় নেই
এবং তারা চিন্তিতও হবে না। আর যারা আমার
নাফরমানি করবে, আর আমার
নিদর্শনকে মিথ্যা প্রতিপন্ন
করবে তারা হবে জাহান্নামী,
সেখানে থাকবে তারা চিরকাল।’ (বাকারা :
৩৮-৩৯)


0 comments:

Post a Comment